স্বচ্ছ কর্মযজ্ঞে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে কুচক্রী মহল

দালাল ও তকবিরবাজদের নিয়ন্ত্রণ করছে মিরপুর বিআরটিএ

Passenger Voice    |    ১০:৫৩ এএম, ২০২৪-০১-২২


দালাল ও তকবিরবাজদের নিয়ন্ত্রণ করছে মিরপুর বিআরটিএ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিশেষ পরিস্থিতিতে পাল্টে যাওয়া দৃশ্যপট এখনও বহাল রয়েছে রাজধানীর মিরপুরের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলের কার্যালয়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে লাইসেন্স কিংবা যানবাহনের নতুন রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা বদলি এবং ফিটনেস করতে আসা মানুষের পেছনে দালালরা লেগেই ছিল, সেই দৃশ্যপট ও এখন পাল্টে গেছে।  মিরপুর বিআরটিএ অফিসকে শৃঙ্খলা ফেরাতে যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে গেছেন এই সার্কেলের উপ-পরিচালক (ইঞ্জিঃ) রফিকুল ইসলাম। প্রযুক্তির ব্যবহারে দালালদের নিয়ন্ত্রণ করতে  সক্ষম হলেও তদবিরবাজরা যেন কোন আইন মানতে চায় না। 

বিআরটিএর মিরপুর অফিসে দালাল নিয়ন্ত্রণে কার্যালয়ের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামরা স্থাপন করা হয়েছে। বিআরটিএ ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর কার্যালয় থেকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা হয় এই সিসি ক্যামরা। এক সময়ে দালালী ও তকবীর বাণিজ্য দুইটি চলতো বিআরটিএর এই সার্কেল অফিসে। বিভাগীয় পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মো. শহীদুল্ল্যাহ ও উপ-পরিচালক (ইঞ্জিঃ) রফিকুল ইসলামের যোগদানের পরে এই কার্যালয়ে অনিয়ম দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য, দালালী ও তদবীর বাণিজ্য প্রায় অনেকাংশে কমে গেছে। 

তবে এখনও কিছু দালাল কৌশলে বিআরটিএর কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে তাদের চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। বিআরটিএর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বেরসিক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণের অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে নিয়মিত।  বিআরটিএর বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ারের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ভয়ও রয়েছে সবার কাছে। একই সাথে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে তদবির বানিজ্যের। কতিপয় রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় টিকে আছে বেশকিছু স্থানীয় নেতা। এছাড়াও মালিক-শ্রমিক নেতা নামধারী কিছু ব্যক্তিও রয়েছে তদবিরবাজির তালিকায়। বাদ যায়নি কতিপয় নামধারী সাংবাদিকও। 

স্মার্ট বিআরটিএ বির্নিমাণের লক্ষ্যে দালালবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকলে সুশৃঙ্খল একটি বিআরটিএ তৈরি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। 

গত বৃহস্প্রতিবার (১৯ জানুয়ারী) প্রায় সারাদিন বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয় ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরো এলাকায় নতুন মুখের আনাগোনা। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ কাজে ব্যস্ত। তবে এখন আর কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করতে বিআরটিএতে আসেনা।

সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার ডিজিটালে রূপান্তরিত করেছে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানকে। গ্রাহক এখন ঘরে বসে পেয়ে যাচ্ছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স। গ্রাহকদের প্রতি দালালদের যত্ন ও আন্তরিকতা বাড়লেও সংস্থাটির ডিজিটালাইজেশন এর কারণে গ্রাহকদের ছুঁতে পারছে না তারা। 

বিআরটিএ কম্পাউন্ডে বরাবরই ‘দালাল দৌরাত্ম্য’ ওপেন সিক্রেট হলেও বর্তমানে সে চিত্রও বদলেছে। তাতে ভূমিকা রয়েছে বিআরটিএ’রও। বিআরটিএ এই সার্কেলের উপ-পরিচালক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের দক্ষতা ও নির্দেশনা এবং অনুরোধে গত বেশ কিছু দিন ধরে নিয়মিত বিআরটিএ এবং এর আশপাশের এলাকায় দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা হতে দেখা গেছে। সড়কের পাশে কিংবা আশপাশের মার্কেট ও দোকানগুলোতে গিয়ে অভিযান টিম হানা দিয়েছেন দালালদের আস্তানায়।

দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা দুই-একটি নয়, পাঁচ লাখেরও বেশি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষই (বিআরটিএ) দিয়েছে এ তথ্য। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা আরও বেশি।

মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যত গাড়ি আছে তার ৭০ শতাংশই সড়ক-মহাসড়কে দিব্যি চলাচল করছে। এসব গাড়ি সড়কে নিত্যদিন যে কী ঝঞ্ঝাট তৈরি করে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজান থাকার কথা নয়। যানজট হয়, দুর্ঘটনা ঘটে, পরিবেশ দূষণ হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চলতে পারছে কিভাবে।

সড়কে গাড়ি চালাতে হলে ফিটনেস সনদের প্রয়োজন হয়। ফিটনেস সনদ ছাড়া কোনো গাড়ি সড়কে চলার কথা নয়। অথচ লাখ লাখ গাড়ি চলছে সনদ ছাড়াই। আবার কিছু কিছু মোটরযানের মালিকরা দালাল ও তদবিরবাজদের দিয়ে আনফিট গাড়ীর ফিটনেস করিয়ে নিত। সেই কাজেও বাঁধ সেধেছে বিআরটিএ। মিরপুর বিআরটিএ অফিসে এখন আর চোখে দেখে ফিটনেস প্রদান করেনা মোটরযান পরিদর্শকগণ।  স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার কার্যক্রম চালু করেছে সংস্থাটি। স্বয়ংক্রিয় মোটরযান ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্র (ভিআইসি) স্থাপন করতে প্রায় সোয়া একশ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, এর মাধ্যমে প্রতি দিন ছয় শতাধিক গাড়ি পরীক্ষা করে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে দালাল ও তদবিরবাজদের কোন কাজ নেই বিআরটিএতে।

মোটরযানের রেজিষ্ট্রেশন গ্রহন, মালিকানা বদলি, রুট পারমিট গ্রহন, ডিজিটাল নাম্বার প্লেট সংযোজনসহ অন্যান্য সেবা নিতে আসা গ্রাহদের সচেতন করতে বিআরটিএ’র তথ্যকেন্দ্র থেকেও একটু পরপরই ঘোষণা করা হচ্ছে, যেন দালালদের খপ্পরে কেউ না পড়েন। লাইসেন্স কিংবা অন্য কোনো ব্যাপারে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ডেস্কে গিয়ে কাজ সারার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলের উপ-পরিচালক (ইঞ্জিঃ) রফিকুল ইসলাম প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যান এর আমলে যে পরিমান পরিবর্তন ও স্বচ্ছতা এসেছে সেটা বিআরটিএর ইতিহাসে বিরল।  আমার অফিস দালাল মুক্ত করার জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অভিযানে দালালরা গ্রেফতারও হচ্ছে। আমরা কার্যালয়ে আসা সম্মানিত গ্রাহকদের অনুরোধ করছি যে সব কাজ অনলােইনে হয় সেগুলো অনলাইনে করে ফেলার। 

এই কর্মকর্তারা আরো বলেন, এখন বিআরটিএ’তে একরকম ‘শুদ্ধি অভিযান’ চলছে। কর্মকর্তারা কোনো ধরনের দালালের হয়রানি ও তদবিরের ঝামেলা ছাড়াই কাজ করতে পারছেন। এ অবস্থা চালু থাকলে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা অনেকখানি নিয়মতান্ত্রিক হবে।  তবে সুবিধা না পেয়ে বেশ কিছু তদবির বানিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা বিআরটিএর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।  সরকারের এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি স্বার্থানৈশি মহল সব সময় কাজ করেন।

বিআরটিএ এর পরিচালক( ইঞ্জিঃ) মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, ‘র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও বিআরটিএর যৌথ অভিযানের ফলে দালাল মুক্ত, হয়রানী মুক্ত সেবা প্রদান করছে রাজধানীর সকল সার্কেল অফিস গুলো। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। জনবলের স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ জনবল বাড়ানো হলে আরও বেশি মানুষকে সেবা দেওয়া সম্ভব হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিআরটিএ এখন সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ প্রতিষ্ঠান। এখানে যে কেউ চাইলে ঘরে বসে এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন, শিক্ষানবিস লাইসেন্স, ফিটনেস গ্রহনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে বিআরটিএতে গাড়ি উপস্থাপন করে ফিটনেস গ্রহন করতে পারছে। এতে একদিকে গ্রাহকের সময় বেঁচে যাচ্ছে অন্য দিকে দালালের হয়রানী থেকে রক্ষা পাচ্ছে।